নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে:

৯আগষ্ট আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আন্তর্জাতিক আদিবাসি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বৈষম্য-নিপীড়ন এবং জাতিগত আগ্রাসনের ফলে বিশ্বের ৭০টিরও বেশী দেশে প্রায় ৪০ কোটি আদিবাসী জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। এবং বিলুপ্ত হয়ে যায় অনেক জাতিসত্তার মানুষ। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতিসংঘ আদিবাসিদের সুরক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে প্রথম আদিবাসী দিবস পালন করা হয়।

বাংলাদেশে বাঙ্গালি ছাড়াও রয়েছে ৪৫টিরও বেশি ক্ষুদ্রজাতিসত্তার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে শুধুমাত্র তিন পাবত্য জেলায় রয়েছে ১১টি সম্প্রদায়। এদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা বর্নমালা কৃষ্টি কালচার পোশাক। কিন্তু সুযোগ সুবিধার অভাবে পাহাড়ে বসবাসকারী এসব ক্ষুদ্র জাতি সত্বার বেশীর ভাগেরই এখনও নিশ্চিত হয়নি মৌলিক অধিকার গুলো। সংরক্ষনের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে তাদের ঐতিহ্যও। তাই জীবন জীবিকার সাথে লড়াই করে হেরে যাওয়া এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় হয় ধর্মান্তরিত হচ্ছে নয়তো দেশান্তরিত হচ্ছে। তাই পার্বত্যাঞ্চলের এসব ক্ষুদ্র জাতি সত্বার অস্তিত্ব রক্ষায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু আজও মেলেনি সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী স্বীকৃতি। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার খুমী সম্প্রদায়ের নেতা লেলুং খুমী বলেন আমরা আদিবাসী স্বীকৃতি চাই,এটা আমাদের আত্ম স্বীকৃত অধিকার,আমরা উপজাতি,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এসব স্বীকৃতি চাই না আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের কে আদিবাসী স্বীকৃতি দেয়া হোক।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, বৈষম্য-নিপীড়ন এবং জাতিগত আগ্রাসনে ৭০টির দেশে প্রায় ৪০ কোটি আদিবাসী জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিলুপ্ত হয়ে যায় অনেক জাতিসত্তার মানুষ। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতিসংঘ আদিবাসিদের সুরক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব সংকটের পাশাপাশি এখনো নানা বৈষম্য আর ভূমি আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে ক্ষুদ্র জাতিসত্বার মানুষ। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাক সম্প্রদায়ের নেতা অং জাই চাক বলেন আমরা দ্যাবিংশ শতাব্দীতে এসেও এখনো নানা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছি। আমাদের চাক সম্প্রদায় হারিয়ে যেতে বসেছে।ভুমি আগ্রসনের স্বীকার হয়ে অনেকে দেশান্তরিত হয়েছে।তাই সরকার আমাদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে আমরা অস্তিত্বের সংকট থেকে বাচব।

পাহাড়ে বসবাসকারী জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন করে আসলেও সরকার তাদের আদিবাসী স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো উপজাতী থেকে ভেঙ্গে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাই আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির লক্ষে আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের স্বদিচ্ছাও মূল বিষয় বলে মনে করেন আদিবাসী নেতারা। বান্দরবান আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক জলিমং মার্মা বলেন আমরা পাহাড়ের মানুষরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাই এবং আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চাই।এ লক্ষ্যে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তিনি আরো বলেন পার্বত্যাঞ্চলে কিছু কিছু সম্প্রদায় শিক্ষা এবং উন্নয়নে অগ্রসর হলেও বেশির ভাগ ক্ষুদ্র-জাতিসত্তার মানুষ এখনও পিছিয়ে। এই সব মানুষদের বিশেষ ব্যবস্থায় উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে অস্তিত্ব আরও বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাঁদের। তাই পার্বত্য জনপদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষায় তাদেরকে আদিবাসী স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি কামনা করেন পাহাড়ী সম্প্রদায়ের নেতারা।